দুটি পন্থার মাঝে মানবাত্মা

দুটি পন্থার মাঝে মানবাত্মা

দুটি পন্থার মাঝে মানবাত্মা

রাশেদ ও মাইকেলের থাকার যুব-আবাসটি খুবই চমৎকার ছিল। সস্তা হওয়া সত্বেও সেখানে খেলার মাঠ, স্টেডিয়াম, পড়াশুনার জায়গা, চিত্তবিনোদনের স্থান, যোগাযোগ ও ফোন করার ব্যবস্থা ছিল। সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল সেখানে তাদের একই বয়স ও একই পর্যায়ের উঁচু সাংস্কৃতিমনা অনেক তরুন পর্যটক ছিল।

মাইকেল ও রাশেদ মিটিং হলের একটি টেবিলের পাশে বসে তাদের পছন্দমত পানীয়ের অর্ডার দিল, অতঃপর মাইকেল কথা শুরু করলঃ

পূর্বের আলোচনায় তুমি যে আলেমের কথা বলেছিলে আমরা তার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে থেমেছিলাম, তিনি যে কথা বলেছিলেন তা কি আমার কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাকি বিরোধপূর্ণ?

রাশেদঃ ব্যাপারটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বা বিরোধপূর্ণ হওয়ার বিষয় নয়; ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন পদ্ধতি, যা স্বয়ং সম্পূর্ণ, স্পষ্ট মূলভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু আমি তোমার সাথে এ ব্যাপারে কথা দীর্ঘায়িত করবনা ..এ আলেমের নাম হলো, ইবনুল কাইয়ুম (রাহঃ), তিনি তার বইয়ে (কলব) অন্তর, (নফস) আত্মা, ও (আকল) জ্ঞান বা বিবেকের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমি তোমাকে শুধু ইঙ্গিত দিব যে, তিনি এ ব্যাপারে যা কিছু বলেছেন তা ইসলামি সভ্যতার মূল ভিত্তি যে সব আদর্শ ও মূল্যবোধ নিয়ে গড়ে উঠেছে তারই পরিস্ফুটন। এজন্যই ইসলামী নীতি-পদ্ধতি এবং পাশ্চাত্য সমাজ ও তার চরিত্রে বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টিকারীফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা স্পষ্ট করার জন্য আমি আমার আগের কথা পূর্ন করতে চাই।

মাইকেলঃসময় বাঁচানোর জন্য সংক্ষেপে আমাকে তোমার শেষ কথাটাকে ব্যাখ্যা করতে দাও। যদি তুমি এর বিপরীত বিশ্বাস কর, তবে আশা করছি তুমি আমাকে শুধরিয়ে দিবে।

রাশেদঃ হ্যাঁ, বল।

মাইকেলঃ ফ্রয়েডের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাক্তিত্বের কতগুলো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়, সেগুলো হলোঃ

ব্যক্তির মাঝে যখন সহজাত-প্রবৃত্তি, আদি বাসনা বা প্রাণী স্বভাব (যাকে খাম খেয়ালি তন্ত্র বলে) (আমি) তন্ত্রের উপর প্রাধাণ্য পাবে তখন তার মাঝে স্বার্থপরতা, অহংকারী ব্যক্তিত্ব ও অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সীমা-লঙ্ঘনকারী হিসেবে প্রকাশ পাবে। যা তাকে সর্বদা তার প্রবৃত্তির পরিতৃপ্তি করতে আহবান করবে, পশুত্বের প্রবৃত্তির ডাকে সাড়া দিবে, তখন (আমি মহান) তন্ত্র তার মূল্যবোধ, চিরাচরিত অভ্যাস ও মহাপবিত্রতার দ্বারা প্রতিরোধ করতে পারবেনা।

আর যখন ব্যক্তির মাঝে (আমি মহান) তন্ত্র তার মূল্যবোধ, চিরাচরিত অভ্যাস ও মহাপবিত্রতা ইত্যাদি (আমি) তন্ত্রের উপর প্রধাণ্য পাবে তখন ব্যক্তিকে রাহেব বা পাদ্রী ও অবাস্তব আদর্শবাদী হিসেবে গড়ে তোলবে আর তার সহজাত-প্রবৃত্তি, আদি বাসনাকে ধ্বংস করে দিবে।

সুস্থ, স্থিতিশীল বা ভরসা জনক ব্যক্তিত্ব হলো যা একদিকে সহজাত-প্রবৃত্তি, আদিম বাসনা ও অন্যদিকে মূল্যবোধ, উন্নত চরিত্রের মাঝে সমতা ও সামাঞ্জস্য রাখবে। এভাবে যে, প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু সহজাত-প্রবৃত্তিকে দমন করবে, আবার কখনো কখনো প্রয়োজন অনুযায়ী মূল্যবোধকে সীমাবদ্ধ করবে, প্রত্যেকটা পরিস্থিতি অনুযায়ী সে এ কাজগুলো করবে।

রাশেদঃ খুবই চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছ। এখানে আমরা এ দৃষ্টিভঙ্গি ও পাশ্চাত্যের সভ্যতা যা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এর মাঝে এবং ইসলামের নীতি ও পদ্ধতিমালার মাঝে পারক্য খুঁজে পেলাম। এ পার্থক্য এভাবে স্পষ্ট হয় যে দেখা যায়, সর্বশেষে (খাম খেয়ালী), (আমি) ও (আমি মহান) তন্ত্রের মাঝে পরস্পর বিরোধ মিটে যায়। আর তা ঘটে জীবনের সবক্ষেত্রে মানবিক সকল দিকের মাঝে সূক্ষ্ম সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে।এর রহস্য নিহিত রয়েছে ঐ বিষয়ের মাঝে,যাকে আমরা অধিকারের সীমালঙ্ঘনে নিষিদ্ধতা বলি।

মাইকেলঃ প্রথমবার তোমার কাছে অধিকারের সীমালঙ্ঘনের কথা শুনলাম। এবার তোমার থেকে জানব কিভাবে অধিকারের সীমালঙ্ঘন করা করা হয়? তবে আমাকে একটু বলতে সুযোগ দাও, তোমার কথা মনস্তাত্ত্বিক ডিভাইস বা যন্ত্রের গঠনপ্রণালীকে স্বীকার করে।

রাশেদঃ মনস্তাত্ত্বিক ডিভাইস বা যন্ত্রের গঠনপ্রণালীর কথা ইতিপূর্বে আমি আলোচনা করেছি যে এক বা একাধিক মুসলিম আলেম শত শত বছর আগে এ রকম কথা বলে গেছেন। দেখ ইবনুল কাইয়ুম (রাহঃ) তার বইয়ে কি বলেছেন, রাশেদ একটি কিতাব বের করলেন, অতঃপর পড়া শুরু

করলেনঃ “অতএব চারটি জিনিসঃ মাকরূহ বা অপছন্দ যা মাকরূহ বা অপছন্দের দিকে পৌঁছায়, আবার কিছু মাকরূহ বা অপছন্দ যা মাহবুব বা প্রিয় জিনিসের দিকে পৌঁছায়। প্রিয় জিনিস যা প্রিয় জিনিসের দিকে পৌঁছায়, আবার কিছু প্রিয় জিনিস অপ্রিয় জিনিসের দিকে পৌঁছায়। যে প্রিয় জিনিস অন্য প্রিয় জিনিসের দিকে পৌঁছায় সে কাজটি করার জন্য দু’টি কারণ বিদ্যমান থাকে। আর যে অপ্রিয় জিনিস অন্য অপ্রিয় জিনিসের দিকে পৌঁছায় সে কাজটি না করার জন্যও দু’টো কারণ থাকে।

বাকি দু’প্রকারে করা ব না করা, দুটির প্রতিই আকৃষ্টকারী কারণ রয়েছে।আর এ দু’প্রকারই মানুষের জন্য বিপর্যয়ের কারণ ও পরীক্ষা। মানুষের আত্মা তার কাছের জিনিসকে প্রভাবিত করে, আর তা হলো তাৎক্ষনিক। আর আকল বা জ্ঞান ও ঈমান বেশি উপকারী ও স্থায়ী জিনিসের প্রতি প্রভাবিত হয়, আর কলব বা অন্তর এ দুয়ের দিকেই আহবান করে।মুসলিম বিজ্ঞ আলেমরা এ ব্যাপারে কোরআন ও হাদিস থেকে উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন যে, যখন মানুষের আকল বা জ্ঞান (আমি মহান তন্ত্র) অলস বা গাফিল হয়ে যায় তখন তার সহজাত-প্রবৃত্তি (খাম-খেয়ালী তন্ত্র) কোন পর্যবেক্ষক ও হিসাব গ্রহণকারীর চিন্তা ছাড়াই সচল হয়ে যায়।

দেখতে পাচ্ছ? ফ্রয়েডের আত্মা ও (খামখেয়ালী তন্ত্রের কার্যক্রম আর মুসলিম আলেমের জ্ঞান, ঈমান) ও (আমি মহান) তন্ত্র এবং অন্তর ও (আমি) তন্ত্রের কাজের কার্যক্রমের মাঝে সাদৃশ্য বিদ্যমান।

মাইকেলঃ তাহলে তাদের উভয়ের কথার মাঝে অনেকটা মিল আছে।

রাশেদঃ তবে এখানে একটা সূক্ষ্ম ও চিরন্তন পার্থক্য রয়েছে, যা দু’টো পদ্ধতিকে পার্থক্য করে দেয়, এটা হলো ইবনুল কাইয়ুমের মতে “ এ দু’টো মানুষের জন্য বিপর্যয় ও পরীক্ষা” আর অন্যদিকে ফ্রয়েড মনে করেন, মানুষের সুস্থ ব্যক্তিত্বের জন্য আমি তন্ত্র/ ইবনে কাইয়ুমের মতে যা কলব, তা সহজাত-প্রবৃত্তির (খাম-খেয়ালী তন্ত্র/ নফসের) ডাকে সাড়া দেয়। ইসলামী রীতিনীতি ও পদ্ধতি অনুসারে সহজাত-প্রবৃত্তি ও অন্তরের প্রবৃত্তির ডাকের কারণ হলো মানুষকে পরীক্ষা করা, আর এসব পরীক্ষা মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। তাই নিজের মনের খামখেয়ালী মত এ সবের ডাকে সাড়া দেয়া যাবেনা, আবার একেবারেই একে আমি মহান তন্ত্রের বাআকল ও ঈমানের মাধ্যমে মূলোৎপাটন করে দমন করার কথাও বলা হয়নি যেভাবে পাদ্রী বা সন্ন্যাসীরা করে থাকেন।

এটাই হলো মধ্যপন্থা ও সামাঞ্জস্যতা, যা ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা নীতিতে পাওয়া যায়না। আর তা হলোঃ মনের খামখেয়ালী ও প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে মানবিক প্রয়োজন এমনভাবে পূরণ করা যাতে আকল বা জ্ঞান ও ঈমানের সাথে বিরোধ না হয় ও অন্যের অধিকারে সীমালঙ্ঘন ও না হয়।

মাইকেলঃ তাহলে অধিকারের সীমালঙ্ঘন আবার কি?

রাশেদঃ উন্নত মূল্যবোধ ও মহান চরিত্রের কিছু আধিকার আছে, আবার অন্যদিকে সহজাত-প্রবৃত্তি ও মানবিক চাহিদারও কিছু অধিকার বা চাওয়া পাওয়া আছে, চারিত্রিক মূল্যবোধ উন্নত আর প্রবৃত্তি খারাপ বিষয় এমন ধারণাবশতঃ এ দুটির একটির মাধ্যমে অপরটির উপর সীমালঙ্ঘন করা ইসলামে নিষেধ। তোমাকে আরো স্পষ্টভাবে বুঝাতে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একটি হাদীস উল্লেখ করব, সেটি হলোঃ একদা তিনজন সাহাবী রাসুলের (সাঃ) গৃহে আসলেন, তার স্ত্রীদের কাছে গৃহে রাসুলের (সাঃ) আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, যখন তারা রাসুলের (সাঃ)আমলের কথা শুনলেন তখন তারা এ আমলকে কম মনে করলেন, আর ভাবলেন এটা হয়ত রাসুলের (সাঃ) নিজস্ব বৈশিষ্ট্য (কেননা আল্লাহ পাক তার পূর্ব ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছে)। আর তাহারা (উক্ত তিন সাহাবা) নিজেদেরকে অনেক গুনাহগার ভেবে আমলের ব্যাপারে অনেক বাড়াবাড়ি করলেন যা তাদের সৃষ্টির সহজাত প্রয়োজনকে কর্তন করল। তাদের মধ্যে একজন বললেনঃ আমি সারা জীবন রাতে নামাজ পড়ব, রাতে ঘুমাবোনা, অন্যজন বললেনঃ আমি প্রতিদিন রোজা রাখব (অর্থাৎ ফজর ত্থেকে সুর্যাস্থ পর্যন্ত খাবার, পানীয় ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকব), তৃতীয়জন বললেনঃ আমি নারী থেকে বিরত থাকব, অতএব জীবনে কখনো বিবাহ করবনা। অতঃপর রাসুল (সাঃ) তাদের কাছে এলেন, বললেনঃ “তোমরা এ ধরণের কথা বলেছ, খোদার শপথ, আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহ পাককে অধিক ভয় করি, কিন্তু আমি রোজা রাখি আবার রোজা ভাঙ্গি, নামাজ পড়ি আবার ঘুমাই এবং নারীকে বিবাহ করি, অতএব, যে আমার সুন্নত থেকে বিমূখ হবে সে আমার দলভূক্ত নয়”। উক্ত তিন ব্যক্তি দ্বীনের মাঝে তথা আমি মহান তন্ত্রের মধ্যে এমন কিছু বিষয় বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন যা মূলতঃ ফযিলত বা পছন্দনীয় বিষয়,কিন্তু এতে অন্য অধিকারের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা হয়েছে; এমনকি যদিও সেটা তার প্রবৃত্তির অধিকার হোক না কেন। এ বিষয়টাকে আরো স্পষ্ট করে অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে,রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “তোমার রবের রয়েছে তোমার উপর অধিকার (ইবাদত করা ইত্যাদি) তোমার আত্মার রয়েছে তোমার উপর অধিকার, তোমার স্ত্রী-পরিবার পরিজনের রয়েছে তোমার উপর অধিকার। সুতরাং প্রত্যেক অধিকাররীকে তার প্রাপ্ত অধিকার বুঝিয়ে দাও”। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে এ ব্যাপারে অনেক আয়াত রয়েছে, যেমনঃ আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ “আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তদ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর, এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেয়ো না। তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না”। (সুরা কাসাসঃ ৭৭)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ “তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে” (সুরা বনী ইসরাঈলঃ ২৯)।

আর বন্ধু তুমি হয়ত জান, ইসলাম সন্ন্যাসী জীবনযাপন হারাম করেছে।

ইসলামে মানুষ তার জ্ঞান ও অন্তর্নিহিত বিবেককে পরিতুষ্ট রাখে ; এর দ্বারা সে দ্বীনের বাস্তবায়ন করে এবং সাথে সাথে তার সহজাত প্রবৃত্তিকেও পরিতৃপ্ত করে, এতে কোন প্রকার সংঘাত, বিরোধ ও বিশৃঙ্খলা থাকেনা।

রাশেদ ও মাইকেল যখন তাদের আলোচনায় মগ্ন ছিল তখন পাশের টেবিলে বসা এক যুবক তাদের কাছে আসল, তাদের সামনে এসে বললঃ

আমি কি তোমাদের সাথে বসতে পারি?

মাইকেল ও রাশেদঃ খুবই আনন্দের বিষয়, বসুন।

যুবকঃ আসলে তোমাদের আলোচনা আমাকে খুবই আকৃষ্ট করেছে, আমি খুবই কৃতজ্ঞ হব যদি আমরা পরস্পর পরিচিত হই এবং তোমাদের আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দাও।

মাইকেলঃ আমার কোন অসুবিধে নেই।

রাশেদঃ তোমাকে সুস্বাগতম, ইনি আমার বন্ধুবৃটেনের অধিবাসী মাইকেল, সে শিক্ষকতা করে। আর আমি মিশরের অধিবাসী রাশেদ, লেখক ও সাংবাদিক।

যুবকঃ তোমাদেরকেও স্বাগতম, তোমরা আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করায় আমি খুবই আনন্দিত। আমি আমার পরিচয় দিচ্ছিঃ আমি ভারতের অধিবাসী রাজিব,জার্মানীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, প্যারিসে কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে এসেছি।

মাইকেল ও রাশেদঃ রাজিব তোমার সাথে পরিচিত হতে পেরে খুবই ভাল লাগল।

রাশেদঃ এভাবেই আমরা দেখি যে, পশ্চাত্যের মনস্তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা নফস বা আত্মাকে তার দোষত্রুটি, অসুখ, ব্যাধি ও দুর্ভোগের কারণ ইত্যাদির দৃষ্টিকোণেই দেখেন। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে নফস বা আত্মা কল্যাণ ও অকল্যাণ দূটিই বহন করে।এতে করে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রয়োজনের মাঝে কোন ধরনের বিরোধ ছাড়াই নফসের পরিবর্তন সাধন করে তাকে পশুত্বের অন্ধকার থেকে বের করে উন্নত চরিত্রের উচ্চ শিখরে উন্নীত করা যায়।

রাজিবঃ আমি তোমাদের আলোচনার সারাংশে বলব যে, যখন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ও চাহিদা সরাসরি পন্থায় বা ভিন্ন ভাবে পরিতৃপ্ত হতে উপায় খুঁজে, তখন তাকে সভ্যতার বিবেচনা করতে হয় যে সভ্যতা উন্নত মূল্যবোধ, চরিত্র নিয়ে গঠিত, আর এটাই ফ্রয়েডের মতে এমন সভ্যতা, যা প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রনের জন্য সৃষ্ট।

ইউরোপীয় সভ্যতার ফলে যে চারিত্রিক মূল্যবোধ তৈরী হলো তাতে মহাবিশ্বের ধারণা বেশি প্রধাণ্য পেল। এ সভ্যতায় মানুষকে অগ্রাধিকার দেয়া হলো এ হিসেবে যে, মানুষই এ বিশ্বের মূল। এসব বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে সে সভ্যতা থেকে ইলাহ বা আল্লাহর ধারণা বিলোপের কারণে । আর ইসলামী সভ্যতায় আল্লাহর ধারনাই হল মূল পরিচারিকাশক্তি, তবে এ ধারণা মানুষের অস্তিত্ব ও গঠনকে চূর্ণ করে না।

রাশেদঃ এটাই বড় দলিল যে, মানবসমাজে উন্নত চরিত্রের জন্য তার উৎস অহী হওয়া অত্যাবশ্যকীয়, মানুষের বিবেক নয়। কেননা মানুষের বিবেক একাকী অবশ্যই পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। আর আকল বা বিবেক যখন ওহীর কাঠামোতে কাজ করবে তখন কাংখিত চরিত্রাবলির সৃষ্টি হবে।

মাইকেলঃ রাজিব, তোমার উপস্থিতি আমাদের আলোচনাকে আরো প্রাণবন্তর করে তুলবে। আমার মনে হয় আমরা কাল কোন এক সময় এখানেই আলোচনার জন্য মিলিত হতে পারি, তোমাদের জন্য কি এ স্থান উপযুক্ত?

রাজিবঃ হ্যাঁ, আমার জন্য উপযুক্ত।

রাশেদঃ আমি খুবই আনন্দিত হব যদি তোমরা কাল ঠিক এই সময়ে আমাদের নতুন বন্ধু রাজিবের সংবর্ধনায় দেয়া দুপুরের খাবারের দাওয়াত গ্রহণ কর।

মাইকেল ও রাজিবঃ অত্যন্ত আনন্দের সাথে আমরা গ্রহণ করলাম।




Tags: