রাসুলদের দাওয়াতের মূলনীতিঃ

রাসুলদের দাওয়াতের মূলনীতিঃ

রাসুলদের দাওয়াতের মূলনীতিঃ

একই মূলনীতি

$Debora Botter.jpg*

ডেবোরা পটার

আমেরিকান মহিলা সাংবাদিক
আসল নির্ভেজাল
ইসলাম মুহাম্মদের নিজের পক্ষ থেকে আগত কোন নতুন ধর্ম নয়। বরং যখন যীশুর আকাশে উত্তোলনের ছয়শ বছর পর জমিনে সে দ্বীন প্রচার হল, তখন তা সে অহি প্রচার করেছে যা সাবেক সব আসমানী ধর্মের মাঝে ছিল। তিনি তাকে তার নির্ভেজাল আসল রূপে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং আল্লাহ যত নবী পাঠিয়েছেন সবাই মুসলিম ছিলেন এবং তাদের বার্তাও সর্বদা এক ছিল।

মূলনীতির দিকে বিবেচনায় সব নবী রাসুলগণের দাওয়াত একই ছিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। (শুরাঃ ১৩)

এজন্যই সব আম্বিয়াদের ধর্ম এক ছিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ হে রসূলগণ, পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন। (মু’মিনুনঃ ৫১-৫২)

যদিও তাদের শরিয়ত ভিন্ন ছিল। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। (মায়েদাঃ ৪৮)

যদি তাদের শরিয়ত মূলনীতির বিপরীত হত তাহলে আল্লাহর হিকমত, উদ্দেশ্য ও তার দয়া থেকে বেরিয়ে যেত, তাই এক নবী যে উসুল নিয়ে এসেছেন অন্য নবী আরেক উসুল নিয়ে আসা অসম্ভব। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ সত্য যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার অনুসারী হত, তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্তী সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। (মু’মিনুনঃ ৭১)

ঈমান ও তাওহীদ

$Dr._Laura_VecciaVaglieri.jpg*

লোরা ভিসিয়া ভাগ্লেরী

ইতালিয়ান মহিলা প্রাচ্যবিদ
সত্য তাওহীদ
রাসুলে আরাবী মুহাম্মদ সঃ তার রবের সাথে নিজের গভীর সম্পর্কের ফলে উদ্দীপক কণ্ঠে আহবান করেছিলেন মুর্তি পূজক ও বিকৃত ধর্মের অনুসারী ইহুদি নাসারাদেরকে বিশুদ্ধতম একত্ব বাদের আকিদার দিকে। সৃষ্টি কর্তার সাথে অন্য উপাস্যের অংশিদারিত্বের দিকে ধাবিত করে মানুষের এমন কিছু পশ্চাতমুখিতার সাথে উম্মুক্ত লড়াইয়ে নেমেছিলেন।

যে সব বিষয়ে সব নবী রাসুলগণ একমত ছিলেন তা হলোঃ

আল্লাহর প্রতি ঈমান, তার ফেরেশতা, কিতাব, নবী রাসুলগণ, আখেরাত, তাকদীরের ভাল মন্দের উপর ঈমান আনা। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ রসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি। তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (বাকারাঃ ২৮৫)

এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ যার কোন শরিক নেই, স্ত্রী, ছেলে সন্তান, অংশীদার, সমকক্ষ, মূর্তিপূজাঁ, দেবদেবীর পূজাঁ আর্চণা থেকে তাঁকে পুতঃপবিত্র মনে করা আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর। (আম্বিয়াঃ ২৫)

এমনিভাবে তার দেয়া সরল সঠিক পথে চলার নির্দেশ, ভিন্ন ও বক্র পথে না চলা, অঙ্গিকার পূরণ, ওজন ও হিসেবে সঠিকভাবে দেয়া, পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা, মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার করা, কথা ও কাজে সততা বজায় রাখা, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরণের অশ্লীল কাজ বর্জন, সন্তানদেরকে হত্যা না করা, অধিকার ছাড়া কাউকে হত্যা না করা, সুদ ও ইয়াতিমের সম্পদ ভক্ষণ না করা, অপচায় না করা, অহংকার না করা, অসৎভাবে মানুষের সম্পদ গ্রাস না করা।

$Marcel.jpg*

মার্সেল বয়যার্ড

ফরাসি চিন্তাবিদ
একই প্রদীপ থেকে...
আগের সব আসমানি ধর্ম বাতিল করা মহাম্মদ সঃ এর ধর্মের বিষয় ছিলনা। বরং তা আসমানী গ্রন্থ সমূহে যে বিকৃতি ও লঙ্ঘন যুক্ত হয়েছে তা শুদ্ধ করে সে সব গ্রন্থকে স্বীকৃতি দেয়। সাবেক সব রাসুলের শিক্ষাকে সব ধরণের অসামাঞ্জস্যতা থেকে পরিশুদ্ধ করা এবং এতে সম্প্রসারণ ও পুর্ণতা দান করা তার দায়িত্ব। যাতে তা স্থান কাল নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

পরকালের প্রতি ঈমান আনা, প্রত্যেক মানুষই অনিবার্যভাবে জানে যে, কোন একদিন সে মৃত্যু বরণ করবে, কিন্তু মরণের পরে তার গন্তব্য কোথায়? সে কি সুখী হবে নাকি হতভাগা হবে? সব আম্বিয়া ও রাসুলগণ তার জাতিকে একথা বলেছেন যে, তারা মৃত্যুর পরে আবার পুনঃজীবিত হবে, সবাই নিজ কর্মের প্রতিফল ভোগ করবে। ভাল কাজের ভাল প্রতিদান আর খারাপ কাজের খারাপ প্রতিদান পাবে। মৃত্যুর পরে পুনরুত্থান ও হিসেবের ব্যাপারটা সুস্থ মস্তিষ্ক ও বিবেক স্বীকার করে। এ ব্যাপারটা আসমানী শরিয়ত শুধু জোড়ালোভাবে সমর্থন করে। সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ও মহাবিজ্ঞ সৃষ্টিকর্তা কোন কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করে খামাখা ছেড়ে দেননি। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি আসমান-যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী কোন কিছু অযথা সৃষ্টি করিনি। এটা কাফেরদের ধারণা। অতএব, কাফেরদের জন্যে রয়েছে দূর্ভোগ অর্থাৎ জাহান্নাম। (ছোয়াদঃ ২৭)

বরং তাদেরকে একটা মহান উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (যারিয়াতঃ ৫৬)

তাই এ মহাবিজ্ঞ স্রষ্টার জন্য এটা ঠিক হবেনা যে, যারা তার অনুগত আর যারা তার অবাধ্য সকলকে সমানভাবে ছেড়ে দিবেন। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আমি কি বিশ্বাসী ও সৎকর্মীদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাফেরদের সমতুল্য করে দেব? না খোদাভীরুদেরকে পাপাচারীদের সম্মান করে দেব। (ছোয়াদঃ ২৮)

এজন্যই তার পূর্ণ হিকমত ও মহাকুদতের বহিঃপ্রকাশ হলো কিয়ামতের দিনে সব সৃষ্টিকুলকে পুনঃরায় জীবিত করবেন, যাতে প্রত্যেকে যার যার কর্মের প্রতিফল ভোগ করতে পারে, ফলে সৎকর্মশীল পুরুষ্কার ও অন্যায়কারী আযাব ভোগ করবে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ (তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, তিনিই সৃষ্টি করেন প্রথমবার আবার পুনর্বার তৈরী করবেন) তাদেরকে বদলা দেয়ার জন্য যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে ইনসাফের সাথে। আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের পান করতে হবে ফুটন্ত পানি এবং ভোগ করতে হবে যন্ত্রনাদায়ক আযাব এ জন্যে যে, তারা কুফরী করছিল। (ইউনুসঃ ৪)

এজন্যই মৃত্যুর পরে হিসেব নিকাশের জন্য আবার জীবিত করা আল্লাহর পক্ষে আরো সহজতর, তিনি কি আসমান জমিন সৃষ্টি করেননি?! তিনি যখন সৃষ্টিকূল কোন নমুনা ছাড়া প্রথমে সৃষ্টি করেছেন, পুনঃরায় সৃষ্টি করা কি তার পক্ষে সম্ভব নয়?! আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তারা কি জানে না যে, আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং এগুলোর সৃষ্টিতে কোন ক্লান্তিবোধ করেননি, তিনি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম? কেন নয়, নিশ্চয় তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (আহক্বাফঃ ৩৩)

আল্লাহ তায়া’লা আরো বলেনঃ যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা,সর্বজ্ঞ। (ইয়াছিনঃ ৮১)

প্রথম সৃষ্টিকারীর পক্ষে পুনঃরায় সৃষ্টি করা অধিকতর সহজ। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ তিনিই প্রথমবার সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর তিনি সৃষ্টি করবেন। এটা তাঁর জন্যে সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (রূমঃ ২৭)

বরং আল্লাহর আদেশে ইবরাহিম (আঃ) এর সামনে মৃত্যু ব্যক্তি দুনিয়াতেই জীবিত হয়েছে। আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক; তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান সম্পন্ন। (বাকারাঃ ২৬০)

বরং ঈসা (আঃ) এর দ্বারা আল্লাহর আদেশে একাজ সংঘটিত করে দেখিয়েছেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ যখন আল্লাহ বলবেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম, তোমার প্রতি ও তোমার মাতার প্রতি আমার অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার দ্বারা সাহায্য করেছি। তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে কোলে থাকতেও এবং পরিণত বয়সেও এবং যখন আমি তোমাকে গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান, তওরাত ও ইঞ্জিল শিক্ষা দিয়েছি এবং যখন তুমি কাদামাটি দিয়ে পাখীর প্রতিকৃতির মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে আমার আদেশে, অতঃপর তুমি তাতে ফুঁ দিতে; ফলে তা আমার আদেশে পাখী হয়ে যেত এবং তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্টরোগীকে নিরাময় করে দিতে এবং যখন আমি বনী-ইসরাঈলকে তোমা থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে, অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কাফের ছিল, তারা বললঃ এটা প্রকাশ্য জাদু ছাড়া কিছুই নয়। (মায়েদাঃ ১১০)




Tags: