একজন পুরুষের জন্য একজন স্ত্রী কি যথেষ্ট?

একজন পুরুষের জন্য একজন স্ত্রী কি যথেষ্ট?

একজন পুরুষের জন্য একজন স্ত্রী কি যথেষ্ট?

রাশেদ তাদের পূর্বনির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে মাইকেলকে সেখানে আগে থেকেই টেবিলে বসা পেল। দেখল, সে ইতোমধ্যে তার জন্য পানীয় নিয়ে নিয়েছে। রাশেদ তাকে অভিবাদন জানিয়ে স্বস্থানে বসল।

মাইকেলঃআমি তোমার পছন্দের পানীয় লেবু-চানিয়েছি.. এভাবেই আমি অনুমান করলাম যে তুমি তোমার পছন্দের পানীয়ই সব সময় পান কর।

রাশেদঃ ভালো ধারনা। যদিও আমি এ পানীয় পছন্দ করি। তবে মাঝে মাঝে রুচির পরিবর্তন ও করি। আমি মনে করি এটা মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস।

মাইকেলঃআমিও তোমার সাথে একমত। আস,এ বিষয় বাদ দিয়ে আমরা নতুন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। দুঃখিত!! তোমার জন্য কি অন্য কোন পানীয়ের অর্ডার দিব?

রাশেদঃ না, না, ধন্যবাদ। মনে হচ্ছে আলোচনার জন্য খুব উদগ্রীব হয়ে আছ।

মাইকেলঃআসলে ব্যাপারটা এরকম নয়; যাতে আমাদের সময়টা অন্য আলোচনায় ব্যয় না হয়ে যায় যেভাবে সেদিন হয়েছিল।

রাশেদঃ তাহলে আলোচনা শুরু করা যাক।

মাইকেলঃবিগত সাক্ষাতে আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, আমি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই আমার ধারনা,তুমি সে বিষয়ে আমার সাথে একমত হবে। যদিও আমি জানি যে,তোমার সমাজে এর বিপরীতমুখী ধারণা প্রচলিত আছে।

রাশেদঃ খুব সুন্দর। আমি মতবিরোধ পছন্দ করিনা। তোমার সাথে আমার আলোচনা গুলো দুজনের যৌথ তুষ্টির উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। কমপক্ষে আমরা যেন সঠিকটা জানতে পারি। তাহলে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাও?

মাইকেলঃসংক্ষেপে বিষয়টি হলো, আমি মনে করি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক উভয়দিক থেকেই একক হওয়া উচিত। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আমার দৃষ্টিতে,ইসলাম যে একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়েছে তা নারীর প্রতি একধরনের জুলুম। তুমি কি আমার সাথে এ বিষয়ে একমত?

রাশেদঃ তুমি কোন নারীর কথা বলছ?

মাইকেলঃ(আশ্চর্য হয়ে) নারী! স্ত্রী... এ সম্পর্কের ক্ষেত্রেঅন্য কোন নারী আছে নাকি?

রাশেদঃ ইতিপূর্বে আমরা একমত হয়েছিলাম যে, সঠিক গবেষণা করতে হলে কোন বিষয়ের সব দিকগুলোই আলোচনায় আসতে হয়, সব দিক বিবেচনা করে সেটা দেখতে হয়।

মাইকেলঃউত্তম কথা, তবে আমাদের এ বিষয়ে সেটা কিভাবে?

রাশেদঃ সেটা হলো, যখন আমরা নারীর স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করব তখন পূর্ন নারী জাতি তথা সকল নারীদের কথা বিবেচনা করব। বরং পুরা সমাজের কথা এবং পুরুষদের প্রয়োজনের কথাও বিবেচনা করব। পুরুষ ও নারীর পার্থক্যগূলোও বিবেচনায় থাকতে হবে।

মাইকেল কথার মাঝে)ঃ হাঁ, এখানেই আমরা নারীর প্রতি জুলুমের মূল উৎসে পৌঁছে গেছি। আমি বলতে চাই নারী পুরুষের মাঝে এ পার্থক্য তোমাদের সমাজে বিরাজমান। এ পার্থক্যগুলো প্রাচ্য সমাজের পুরুষগন নারীদেরকে ব্যবহার ও ভোগের জন্য করেছিল। এটা কি ধরনের পার্থক্য? কেন নারীরা পুরুষদের মত একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারবেনা? এটা কি এ সমাজের পুরুষদের যৌনলালসার প্রমাণ নয়?

রাশেদঃ হে বন্ধু একটু থাম, তুমি আমাকে এমনসব প্রশ্নবানে জর্জরিত করছ যে, এককথায় এগুলোর উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। আমরা এর সবগুলোই একে একে আলোচনা করব।এখন আমাকে একটা একটা করে বিশ্লেষন করার সুযোগ দাও। যে বিষয়টি তোমার ক্রোধের উদ্রেক করেছে প্রথমে তা দিয়েই শুরু করতে চাই। তুমি কি আমার সাথে একমত নয় যে, নারী পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য রয়েছে?

মাইকেলঃ কিসের পার্থক্য ?

রাশেদঃপ্রথমতঃ নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠনের দিক থেকে জৈবিক পার্থক্য।

মাইকেলঃহ্যাঁ, জৈবিক পার্থক্য তো আছে। তবে আমাদের আলোচনার সাথে এর সম্পর্ক কি?

রাশেদঃ আমি তোমাকে ধর্মের দিক বিবেচনায় বলবনা; কেননা ধর্মে যা বলে তাতো কোন সন্দেহ সংশয় ছাড়াই মেনে নেয়া জরুরি। তাই আমি তোমাকে জ্ঞান- বিজ্ঞানের ভিত্তিতে কথা বলব, যা তুমি ইতিপূর্বে বলেছ যে তুমি এসব বিশ্বাস কর। শুন হে দোস্ত.....

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, ভালবাসার পরিমান (রসায়ন) নারীদের থেকে পুরুষেরা আলাদা। এ কারনে অনেক বৈজ্ঞানিক গবেষণা এ কথায় উপনীত হয়েছে যে, নারী পুরুষের ভালবাসার অনুভূতির অনেক পার্থক্য রয়েছে। ফলে বিজ্ঞানীগন আশ্চর্যজনক ফলাফলে উপনীত হয়েছেন যে, পুরুষের জিনসমূহ একাধিক ভালবাসার দিকে ঝুঁকে, পক্ষান্তরে নারীর জিনসমূহ স্থায়ী ও একটিমাত্র ভালবাসার দিকে ঝুঁকে থাকে। ফলাফলে আধুনিক বিজ্ঞান একথা বলতে বাধ্য হচ্ছে যে, একজন পুরুষ দুয়ের মাঝে কোন পার্থক্য ছাড়াই একাধিক নারীকে ভালবাসতে পারে। সি,এন, এন এর ওয়েবসাইটে মার্কিন ইউটা ভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক লিজা ডায়মন্ড

বলেছেনঃ জীব বিজ্ঞানে অনেক দলিল প্রমান রয়েছে যে, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষদের একাধিকের প্রতি যে চাহিদা, তা তাদের শারীরিক গঠনগত চাহিদার দাবি। বৃটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ২০০৭ সালে তাদের এক গবেষণায়

বলেছেনঃ নারীরা পুরুষদের থেকে আলাদ। তাদের অধিক মনোযোগ তাদের শরীর ও সন্তানের দিকে হয়ে থাকে। এটা তাদের এয়ালোষ্টোযেন হরমোনের কারনে হয়ে থাকে যা তাদেরকে বাচ্চা লালন-পালনের সাথে বেশি সম্পৃক্ত করে।

আরেকটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পুরুষের মস্তিষ্ক নারীর মস্তিষ্কের প্রায় দ্বিগুন বড়। সম্ভবত পুরুষ এবং মহিলার মস্তিষ্কের মধ্যে বৃহত্তম পার্থক্য হল যে পুরুষদের কামেচ্ছা শক্তি নারীদের চেয়ে আড়াইভাগ বেশি।

সুতরাং হে বন্ধু তুমি কি মনে কর যে নারী পুরুষের এসব শারীরিক পার্থক্য বাস্তবে কোন প্রভাব ফেলেনা!?

মাইকেলঃযদি এসব তথ্য সত্য হয় তবে অবশ্যই এতে প্রভাব ফেলবে।

রাশেদঃ অতএব বোঝা গেল, তুমি যেটাকে পুরুষদের যৌনলালসা বা একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক বলছ, তার সাথে ইসলাম বা প্রাচ্য সমাজের কোন সম্পর্ক নেই। আমি তোমাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আশা করছি, তুমি সরলপ্রাণে এর স্পষ্ট উত্তর দিবে। তোমার এমন কতজন বন্ধু বা পরিচিতজন আছে, একাধিক নারীর সাথে যাদের সম্পর্ক নেই? আমি তোমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বলছিনা।

মাইকেলঃএমনকি যদি তুমি আমার কথাও জিজ্ঞেস করতে; এটা আমাদের সমাজে ব্যাপক ও সাধারন প্রচলিত ব্যাপার... তবে এটা তো আর বিয়ে নয়।

রাশেদঃতাহলে আমাদের সমাজে যা আছে তা তোমাদের সমাজেও আছে, তবে একটা বড় পার্থক্য আছে যা আমি এখন উল্লেখ করব।

এছাড়াও আমি আরো যোগ করব যে, ইসলাম একাধিক বিবাহের প্রচলন করেনি। প্রাচীন অনেক সভ্যতায় একাধিক বিবাহের কথা প্রসিদ্ধ আছে। তবে তাদের কাছে আসমানী ধর্মগুলোর মতো একাধিক বিবাহের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা ছিলনা। মধ্যযুগ পর্যন্ত ইহুদি ধর্মে বহুবিবাহ বৈধ ছিল, পরে পাদ্রী “গারশুম এশকেনাজি” (৯৬০-১০৪০) এ আইন বাতিল করেন। আর খৃষ্টানদের চার্যগুলো সপ্তদশ শতাব্দিতে বহুবিবাহ আইন নিষেধ করেন। তবে এখনও কোন কোন চার্যের নিকট এটি বৈধ, যেমনঃ মরমান্স সম্প্রদায় । তাদের কাছে বহুবিবাহ এখনও বৈধ।­

মাইকেলঃ তাহলে এসব বহুবিবাহ প্রথা সনাতন যুগে ছিল। এখন তো মানুষ উন্নত হয়েছে, সভ্য হয়েছে!

রাশেদঃ মানবসভ্যতার অগ্রগতি মানুষের স্বভাবজাত প্রক্রিয়া ও তাদের প্রয়োজনের বিপরীতমুখী হতে পারেনা। ফলে এটা যুক্তিসংগত নয় যে, আদিম যুগে মানুষ পশুর মাংশ খেত, ভেড়ার পশমের পোশাক পরত তাই তারা অসভ্য ও হিংস্র ছিল। তবে আমরা এটা বলতে পারি যে, মানবসভ্যতার ক্রমোন্নতি মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে হচ্ছে এবং জীবনযাপনকে আরো সহজ ও গতিময় করে তুলছে। আর এসব নিয়েই ইসলামের আগমন।

মাইকেলঃকিভাবে?

রাশেদঃ তুমি বলেছ যে, তোমাদের প্রাচ্য সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বাহিরেও প্রেম ও যৌন সম্পর্ক রয়েছে। আর এটাই নারীর প্রতি সবচেয়ে বড় জুলুম ও সমাজের জন্য বিশৃংখলা।এ সম্পর্কে আত্মিক প্রশান্তি মিলেনা, কারো অধিকার সাব্যস্ত হয়না এবং সামাজিকতাও সৃষ্টি হয়না। অন্যদিকে,পুরাতন যুগে যখন কোন সীমারেখা ছাড়াই বহুবিবাহ প্রথা চালু ছিল তখন ইসলাম এসে নারীর উপর ইনসাফ করেছে, তাদের প্রয়োজনের ডাকে সাড়া দিয়েছে, তাদরকে স্বামীর বৈধ জীবনসংগী করেছে। আর এ সামাজিক ভিত তথা পরিবারের সফলতার গ্যারান্টি স্বরূপ স্বামীর উপর কতিপয় নিয়ম-কানুন ও বিধি-বিধান আরোপ করে দিয়েছে।

ফলে ইসলাম সব নারীর স্বার্থকে রক্ষা করেছে। পুরুষের যৌনতার সংযতা ও যথেচ্ছারিতার মাঝে সমতা এনেছে। আর এসব করেছে সামাজিক একটা ভিত্তি তথা পরিবারের আওতায়; তোমাদের সমাজে যে ভিত্তি ভেঙ্গে পড়েছে।

মাইকেলঃকিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, নারী-পুরুষের জন্মের হার প্রায়ই কাছাকাছি, ফলে যদি আমরা বহু বিবাহের প্রথা বাস্তবায়ন করি তবে কিছু পরুষ স্ত্রী ছাড়া থাকবে, যাতে একটা ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হবে।

রাশেদঃ পরিসংখ্যান যদি এটা বলে থাকে তবে ইহা একথাও বলে যে, নারীর গড় বয়স পুরুষের গড় বয়সের চেয়ে বেশি। পশ্চিমা সমাজে পুরুষেরা গড়ে নারীর চেয়ে সাত বছর কম বেচে থাকে। এ পার্থক্য গত কয়েক শতাব্দি ধরে বেড়ে চলছে। উদাহরন স্বরুপ বলা যায় যেঃ ১৯০০ সালে জার্মানিতে নারীর গড় আয়ু ৮০ বছর, অন্যদিকে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর।

আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ক্রোজার বলেনঃ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পুরুষেরা নারীরদের তুলনায় কম আয়ু পেয়ে থাকেন ...... তিনি আরো যোগ করেন যে, এ পার্থক্যের কারন হল নারী- পুরুষের হরমোনগত পার্থক্য। পুরুষের হরমোন জিনের মধ্যে এমন সক্রিয়তা সৃষ্টি করে যা হৃদরোগ ও রক্তচাপ ইত্যাদি মারাত্মক ব্যাধির কারন হয়ে থাকে।

আমি এখানে আরো কিছু যোগ করতে চাই, তাহলোঃ বিভিন্ন দেশে যে বিশৃঙ্গখলা, বিদ্বেষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও সংঘর্ষ- মারামারির কারনে মানুষ নিহত হচ্ছে এছাড়া এক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেবিশ্বে যেসব হাজার হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে, তার অধিকাংশই পুরুষ।

অর্থাৎ সমাজে নারীর সংখ্যা পুরুষের সংখ্যার চেয়ে বেশি। এটা বাস্তবতা, যা বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। এর সাথে আরো যোগ করতে চাই তালাকপ্রাপ্ত ও বিধবা নারীদের সংখ্যা।

এখন নারীদেরকে কি অবিবাহিত রেখে মানসিক, সামাজিক ও চারিত্রিক সমস্যার মাঝে ছেড়ে দেয়া হবে? নাকি তাদেরকে গোপনে তাদের অধিকার ও স্বভাবজাত যৌন পরিতৃপ্তির মিটানোর জন্য বিশৃংখলভাবে ছেড়ে দেয়া হবে, ফলে এর খারাপ প্রভাব তার ও সমাজের উপর পড়বে। নাকি তাদের জন্য উত্তম হবে সামাজিক সুন্দর একটি নিয়ম প্রনয়ন, যা সুষ্ঠ নীতিমালার ভিত্তিতে তাদের প্রয়োজন মিটাবে; যেসব নীতিমালা তাদের শক্তি সামর্থ ও মানবিক পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। আর এসব সম্পন্ন হবে ন্যায় ও ইনসাফের আলোকে, কোনপ্রকার জলুম ব্যাতিরেকে এবং কারো উপর কোন চাপ সৃষ্টি ছাড়া?

ফ্রান্সের সমাজ বিজ্ঞানী প্রফেসর ডক্টর যোসেফ লুবুন এর উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ “প্রাচ্যদেশে (তিনি ইসলামকে বুঝিয়েছেন) যে বহুবিবাহ প্রথা চালু আছে এটা একটা সুন্দর নিয়ম। এতে সে জাতির মাঝে চারিত্রিক অবকাঠামো উন্নতি হয়, পারিবারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়, নারীরা সম্মান ও সুখী হয়, যা আমরা ইউরোপীয় দেশগুলোতে দেখিনা”.........।

আমাকে এককাপ লেবুর জুস ও চা খেতে অনুমতি দাও।




Tags: